ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয় পত্র

ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয় পত্র




২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযোগীতায় “ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন এবং জাতীয় পরিচয় পত্র প্রদানে সহায়তা প্রদান প্রকল্প” – এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সকল প্রাপ্ত বয়স্ক নাগরিককে জাতীয় পরিচয় পত্র প্রদান করে। সাথে সাথে ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরী করা হয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন দেশের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়। এই প্রকল্পে যারা ভোটার হতে পারেনি এবং প্রকল্পের পরে যাদের বয়স ১৮ বছর হয়েছিল তাদের জন্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয় নিজস্ব তত্ত্বাবধানে ২০০৯ সালে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করণ ও জাতীয় পরিচয় পত্র প্রদান প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে পুণরায় ছবিসহ ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়। যেহেতু এই প্রকল্পটি দেশব্যাপী বৃহৎ পরিসরে হয়েছে তাই কিছু ভুল-ত্রুটি রয়ে গেছে। কারো কারো নামের ভুল কিংবা পিতা/মাতার নামের ভুল কিংবা ঠিকানার ভুল ইত্যাদির জন্য জনগণকে ঢাকাস্থ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের প্রকল্প অফিসে যোগাযোগ করতে হয়। প্রকল্প কার্যালয়টি আগাঁরগাওস্থ ইসলামী ফাউন্ডেশন ভবনের ৭ম তলায় অবস্থিত। অফিস থেকে যেসব সেবা প্রদান করা হয় তাঁর বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হলো:
অবস্থান:
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ভবন (৭ম তলা), আগারগাঁও, শেরে বাংলা, ঢাকা -১২১৭।
কর্মঘন্টা:
সকাল ১০.০০ টা হতে বিকাল ৫.০০ টা পর্যন্ত।
নতুন ভোটার হতে চাইলে
জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক কোন ব্যক্তির বয়স যদি ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি বা তার পূর্বে ১৮ বছর হয়ে থাকে তাহলে সে ব্যক্তি ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবে। এজন্য প্রথমে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে একটি একাউন্ট খুলতে হবে। একাউন্ট খুলতে প্রয়োজন হবে একটি কার্যকরী ই-মেইল আইডি এবং একটি মোবাইল নাম্বার। তারপর নিম্নোক্ত ধাপ গুলো অনুসরণ করত হবে।

ধাপসমূহ
  • ধাপে ধাপে সকল তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে
  • নিজের পূর্ণনাম ছাড়া সকল তথ্য বাংলায় ইউনিকোডে পূরণ করতে হবে
  • সকল ধাপ সম্পন্ন হবার পরে প্রিভিউএর মাধ্যমে সকল তথ্য পুনর্বার যাচাই করে নেওয়া যেতে পারে
  • পিডিএফ ফাইল তৈরি করে সেটি প্রিন্ট করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ নিকটস্থ নির্বাচন অফিসে জমা দিতে হবে
  • আপনার প্রদত্ত তথ্যাদি যাচাই এবং ঠিকানা যাচাইয়ের পরে তথ্যাদি সঠিক নিশ্চিত হলে আপনার কার্ড তৈরি হবে
  • কার্ডের রশিদ জমা দিয়ে কার্ড সংগ্রহ করতে হবে
নির্বাচন অফিসে প্রিন্ট কপি জমা দেওয়ার সময় যে যে কাগজপত্র প্রয়োজন হবেযা নিন্মরুপ-
  •  এস এস সি পরীক্ষার সনদ
  •  জন্ম নিবন্ধন প্রমাণের সনদ
  •  পাসপোর্ট/ড্রাইভিং লাইসেন্স/এনআইটি প্রমাণের সনদ
  • ইউটিলিটি বিলের কপি/বাড়ি ভাড়ার রশিদ/হোল্ডিং ট্যাক্স রশিদ (ঐ এলাকায় সচারচর বাস করেন এরুপ কোন প্রমাণ)
  • নাগরিকত্বের সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
  • বাবা, মা, স্বামী-স্ত্রীর আইডি কার্ডের কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
লিঙ্ক
https://services.nidw.gov.bd/newVoter

জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন:
প্রকল্প কার্যালয়ে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন সম্পর্কিত সেবা গ্রহণ করতে হলে প্রকল্প পরিচালককে সম্বোধন করে সাদা কাগজে/নির্ধারিত ফর্মে আবেদন করে নির্দিষ্ট কাউন্টারে জমা দিয়ে প্রাপ্তি স্বীকার পত্র গ্রহণ করতে হবে।

১. নিজ/পিতা/স্বামী/মাতার নামের বানান পরিবর্তনে নিম্নোক্ত সনদসমূহের সত্যায়িত অনুলিপি জমা দিতে হবে।
  • এস.এস.সি/সমমান সনদ
  • নাগরিক সনদ
  • জন্মসনদ
  • চাকুরীর প্রমাণপত্র
  • পাসপোর্ট
  • নিকাহনামা
  • পিতা/মাতা/স্বামীর জাতীয় পরিচয় পত্রের অনুলিপি
এক বা একাধিক দলিল দেওয়া যাবে। নিজের ডাকনাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পরবর্তীতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে শুনানী হবে এবং মূল কাগজপত্র দেখাতে হবে।

২. বিবাহ/বিবাহ বিচ্ছেদের কারণে সংশোধন:
  • বিবাহের ক্ষেত্রে স্বামীর নাম অন্তর্ভুক্ত করতে বিবাহের কাবিননামা ও স্বামীর জাতীয় পরিচয় পত্রের অনুলিপি।
  • বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে স্বামীর নাম বাদ দিতে চাইলে তালাক নামার সত্যায়িত কপি দিতে হবে।

৩. পিতা/মাতার নাম পরিবর্তন:
পিতা/মাতার নাম আমূল পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আবেদনের সাথে নিম্নোক্ত কাগজ দিতে হবে।
  • এস.এস.সি/এইচ.এস.সি/সমমান পরীক্ষার সনদ/রেজি.।
  • পিতা/মাতার জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি।
  • পিতা/মাতা মৃত হলে ভাই/বোনের জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি।
  • অন্য কোন গ্রহণযোগ্য কাগজ সত্যায়িত কপি।
বি.দ্র. প্রকল্প কর্মকর্তার কাছে সাক্ষাৎকার দিতে হতে পারে।

৪. জন্ম তারিখ পরিবর্তন:
যাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম এস.এস.সি/সমমান
  • তাদের অবশ্যই এস.এস.সি/সমমান পরীক্ষার সনদের সত্যায়িত কপি।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অধীনে প্রয়োজনে শুনানীতে অংশ নিতে হবে।
যাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এস.এস.সি/সমমানের নীচে তাদের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয় পত্র ইস্যুর তারিখের পূর্বের
  • সার্ভিস বুক/এমপিও’র কপি
  • ড্রাইভিং লাইসেন্স
  • পাসপোর্ট
  • জন্ম সনদ
  • নিকাহনামা
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অধীনে প্রয়োজনে শুনানীতে অংশ নিতে হবে। সরেজমিনে তদন্ত করা হয়।

৫. বিবিধ সংশোধন:
জাতীয় পরিচয় পত্রে নামের পূর্বে কোন পদবী, উপাধি, খেতাব ইত্যাদি সংযুক্ত করা যাবে না
  • পিতা/মাতা/স্বামীকে মৃত উল্লেখ করতে মৃত্যু সনদ দাখিল করতে হবে।
  • পিতা/মাত/স্বামীকে ভুলক্রমে ‘জীবিত’ কে ‘মৃত’ হিসেবে উল্লেখ করলে পিতা/মাতা/স্বামীর পরিচয় পত্র দাখিল করতে হবে।

৬. রক্তের গ্রুপ সংশোধন:
রক্তের গ্রুপ অন্তর্ভুক্ত/সংশোধন করতে মেডিকেল প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।

৭. ঠিকানা সংশোধন:
ঠিকানা পরিবর্তনের জন্য ইসি কর্তৃক প্রকাশিত ফরম ১৩/ফরম ১৪ সংশ্লিষ্ট থানা/উপজেলা নির্বাচন অফিসে আবেদন করতে হবে। তবে ঠিকানায় বাসা/সড়ক নম্বর ভুল বা বানান ভুল প্রকল্প অফিসে সংশোধন করা হয়। এক্ষেত্রে নিমোক্ত কাগজ পত্র প্রয়োজন হবে।
  • ইউটিলিটি (বিদ্যুৎ/ওয়াসা/ফোন) বিলের কপি।
  • চেয়ারম্যান/কমিশনারের প্রত্যয়ন পত্র।
  • পরিবারের সদস্যের পরিচয় পত্র।

৮. হারিয়ে গেলে
  • পরিচয় পত্র হারিয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট থানায় ভোটার নম্বর/আইডি নম্বর উল্লেখ করে সাধারণ ডাইরি (জিডি) করতে হবে। জিডির মূল কপি সহ সাদা কাগজে/নির্ধারিত ফর্মে আবেদন করতে হবে।

৯. অবিতরণকৃত পরিচয় পত্র বিতরণ:
  • প্রকল্প অফিস, ঢাকা সিটি কর্পো: (ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, শ্যামপুর ব্যতীত) ২০০৭-০৮ সালের অবিতরণকৃত পরিচয় পত্র দেওয়া হয়।
  • অন্যান্য জেলার ক্ষেত্রে মূল প্রাপ্তি স্বীকার পত্র সংশ্লিষ্ট জেলা/উপজেলা/থানা নির্বাচন কর্মকর্তার মন্তব্যসহ প্রাপ্তি স্বীকার পত্র জমা দিয়ে পরিচয় পত্র নেওয়া যাবে।

নির্বাচন কমিশন থেকে এসব সেবা সমূহ নিতে কোন প্রকার চার্জ/ফি দিতে হয় না।

আবেদনের কতদিন পরে পাওয়া যায়:
আবেদনের পর ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে পরিচয় পত্র দেওয়া হয়। ডেলিভারীর তারিখের পর থেকে ৭ দিনের মধ্যে পরিচয় পত্র না নিলে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

সত্যায়ন:
জমাকৃত ফটোকপি দলিলাদি অবশ্যই সত্যায়িত করে দিতে হবে। মূল পরিচয় পত্র (যদি থাকে) সঙ্গে আনতে হবে।
ওয়েব সাইট: www.ecs.gov.bd/Bangla
ঢাকা জেলা অফিস:
৬৭ পশ্চিম আগারগাঁও (পানির ট্যাংক) শেরে বাংলা নগর, ঢাকা-১২১৭।

আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরের গোপন সংকেত বা মানে জানুন
বাংলাদেশী হিসাবে আমাদের অনেকেরই জাতীয় পরিচয় পত্র আছে। অনেকে এটাকে ভোটার আইডি কার্ড হিসাবে বলেন যেটা সম্পূর্ন ভূল। এটার ন্যাশনাল আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয় পত্র।

আপনারা দেখলেন এটার নীচে লাল কালি দিয়ে লেখা ১৩ সংখ্যার একটা নম্বর আছে যাকে আমরা আইডি নম্বর হিসাবে জানি। কিন্তু এই ১৩ সংখ্যার মানে কি?

১. প্রথম ২ সংখ্যা – জেলা কোড। ৬৪ জেলার আলাদা আলাদা কোড আছে। ঢাকার জন্য এই কোড ২৬।
২. পরবর্তী ১ সংখ্যা – এটা আর এম ও (RMO) কোড।
সিটি কর্পোরেশনের জন্য -৯
ক্যান্টমমেন্ট -৫
পৌরসভা -২
পল্লী এলাকা -১
পৌরসভার বাইরে শহর এলাকা -৩
অন্যান্য - ৪

৩. পরবর্তী ২ সংখ্যা -এটা উপজেলা বা থানা কোড
৪. পরবর্তী ২ সংখ্যা - এটা ইউনিয়ন (পল্লীর জন্য) বা ওয়ার্ড কোড (পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনের জন্য)
৫. শেষ ৬ সংখ্যা - আইডি কার্ড করার সময় আপনি যে ফর্ম পূরণ করেছিলেন এটা সেই ফর্ম নম্বর।

বিশেষ দ্রষ্টব্য
নষ্ট বা হারানো পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে আগস্ট ২০১৫ পর্যন্ত কোন প্রকার ফী গুনতে হত না। ১লা সেপ্টেম্বর ২০১৫ থেকে নষ্ট বা হারানো পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে একটি নির্ধারিত ফী দিতে হতে পারে। ফী গুলো নিম্নরুপঃ
(১)জাতীয় পরিচয়পত্র নবায়নের জন্য নাগরিকদের (সাধারণ১০০ এবং জরুরি ক্ষেত্রে ১৫০ টাকা ফি দিতে হবে।
(২)হারানো বা নষ্ট হওয়ার কারণে নতুন জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য প্রথম বার  সাধারণ ২০০ টাকা, জরুরি প্রয়োজনে ৩০০ টাকা লাগবে। দ্বিতীয় বার সাধারণ ৩০০ টাকা, জরুরি প্রয়োজনে ৫০০ টাকা লাগবে। পরবর্তী যেকোনো সময়ের জন্য সাধারণ ৫০০ টাকা এবং জরুরি ক্ষেত্রে এক হাজার টাকা ফি দিতে হবে।
উল্লিখিত ফি নির্দিষ্ট খাতে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে বা নির্বাচন কমিশনের সচিবের অনুকূলে পে-অর্ডার বা ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে বা কমিশন কর্তৃক নির্দিষ্ট নম্বরে মোবাইল ব্যাংকিং বা অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে।
প্রাথমিকভাবে সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। সবাই সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ট্রেজারি চালান করতে পারবে। পর্যায়ক্রমে অন্য সব ব্যাংকের সঙ্গেও চুক্তি করার পরিকল্পনা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের।
বিস্তারিত তথ্যের জন্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন
https://services.nidw.gov.bd/login/loginHome

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

Cyberlink PowerDirector 14 Crack Full Free Download

সেরা কম্পিউটার বাংলা টিপস - ট্রিক্স

ডাউনলোডের সময় অপ্রয়োজনীয় অপশন এড়িয়ে চলুন